শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ কি?

WhatsApp Group (Join Now) Join Now
Telegram Group (Join Now) Join Now
শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অনেকেই অবগত আছি। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ কি? দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অগ্রসর অর্থনীতির দেশ শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক অবস্থা চরমে পৌছেছে । বৈদেশিক ঋণেরবোঝায় হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। সরকারের বি্রুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিক্ষোপ এখন সহিংশতায় রুপ নিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তীব্র ঘাটতির কারণে রাজাপাকসের সরকার জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় পন্য আমদানিতে পুরপুরি ব্যর্থ। দেশটিতে এখন ১৩ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। নিত্যপন্যের দাম আকাশছোঁয়া, শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থার জন্য রাজাপাকসের সরকারকে দায়ী করছে জনগন। তবে এর কিছু বিষের কারন রয়েছে।

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের প্রধান কারণ

অপ্রয়োজনীয় খাতে বিনিয়োগ, আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি, দুর্বল সরকারি অর্থব্যবস্থা এবং করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। এতে লঙ্কান সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটনশিল্প ধসে পড়েছে, বিদেশি রেমিট্যান্স পৌঁছেছে তলানিতে। আর এর প্রভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত এক মাসে কয়েক ধাপে ২৫% বেড়েছে।

চীনা ঋণের ফাঁদ

কিছু পশ্চিমা মিডিয়া এ অসত্য দাবি প্রচার করছে যে এটি চীনের ‘ঋণের ফাঁদ’ যা শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, দেশটির ঋণ কাঠামো বেশ জটিল। শ্রীলঙ্কা তাদের একটা সমুদ্র- বন্দর এর উন্নতির জন্য চিন থেকে অনেক টাকা নিয়েছে। এই অধিক পরিমান টাকা শ্রীলঙ্কা কখনো শোধ করতে পারবে না (যদিনা কাল্পনিক কিছু ঘটে)। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক এই অর্থনৈতিক অবস্থা জেনেও চীন টাকা ঋণ দিয়েছে। কারণ,  চীনের স্ট্র্যাটেজি হলো অনেক পরিমান টাকা লোন দেবো, এই টাকা তো কোনো দিন পাবো না জানি, তাই ল্যান্ড টা চীনের হয়ে যাবে। এইভাবে চিন তাদের ভৌগলিক আয়তন বাড়াতে চায়। এখন, শ্রীলঙ্কার এই sea-port থেকে সেই রকম আয় হয় না। এত পরিমান বিদেশি ঋণের লোন শোধ করার কথা শ্রীলঙ্কা ভাবতেও পারে না। তাই শ্রীলঙ্কার আর্থিক অবস্থা এখন বেশ সঙ্কটজনক।

রাজনৈতিক স্বার্থ

বর্তমান সংকটের অন্যতম একটি কারণ ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রধানমন্ত্রি রাজাপাকসের কর হ্রাসের প্রতিশ্রুতি। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনা করে যে, যদি জিনিসপত্রের উপর টেক্স কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে লোকজনও বেশী খরচ করবে। এতে সরকারের অনেক লাভ হবে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের টেক্স কমানোর ঘোষণার ২-৩ মাস পরেই লকডাউন চালু হয়। তাই তার এই পরিকল্পনাটি আশানুরূপ ফল দেয়নি।

শ্রীলঙ্কার বর্তমান সংকটের অন্যান্য কারণগুলি 

কৃষিখাতঃ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসা অর্গানিক ফার্মিং এর পরিকল্পনা করেছিলেন। অর্থাৎ, কোনো সার, পেস্টিসাইড, কীটনাশক এইগুলি ব্যাবহার না করে ফসল ফলানো। কিন্তু তার এ পরিকল্পনা সফল হয় নি। তাই খাদ্য সংকট দেখা দিল দেশে। অবশেষে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। আগে শ্রীলঙ্কা নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য ধান নিজেরা উৎপাদন করে ফেলতো। এখন, অর্গানিক ফারমিং এর ফলে ফসল এতটাই কম হয় যে, ধান পর্যন্ত ইন্ডিয়া থেকে আমদানি করতে হয়।

শ্রীলঙ্কার পর্যটনখাত

শ্রীলঙ্কার বিদেশি আয়ের বিপুল অংশ নির্ভর করে বিদেশি আয়ের উপর। শ্রীলঙ্কার গির্জায় সম্প্রতি বোম্ব ব্লাস্ট এর ঘটনায় এখানে আগের তুলনায় পর্যটক কম আসে। তাই পর্যটন ক্ষেত্রে আয় কমে গেছে। পর্যটন ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার আয় যথেষ্ট ভালো হতো। তাছাড়া, মহামারি  covid-১৯ এর কারণেও পর্যটক কম আসায় দেশটি বেশ আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে। মন মানসিকতা ভালো রাখার উপায় কি?

জ্বালানীখাত

সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রান যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানী তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দ্বীপরাষ্ট শ্রীলঙ্কায় এর বিপুল সংকট তৈরি হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে।  বর্তমান অস্থিরতার জন্য শ্রীলঙ্কার সরকার ইতোমধ্যে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। সবশেষ কথা হচ্ছে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মূল কারন হচ্ছে দেশের সকারের দূরদর্শিতার অভাব। বিশ্বে শ্রীলংকা থেকেও অনেক এমন ছোট রাষ্ট্র রয়েছে যারা নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ ও উন্নত বিশ্ব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। অনেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা জল্পনা কল্পনা করছে।

Leave a Comment